অযু করার নিয়ম ওযুর ফরজ সুন্নত ও মুস্তাহাব কয়টি ও কি কি

অযু করার নিয়ম

আজকে আমরা শিখবো অযু করার নিয়ম এবং ওযুর ফরজ সুন্নত ও মুস্তাহাব কয়টি ও কি কি আরো শিখবো ওযুর আগে ও পরের দোয়া সকল দোয়া বাংলা উচ্চারণ ও বাংলা অর্থ সহ। শেষে আমরা দেখবো ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি কি কি ও ওযুর শেষে কোন দোয়া পাঠ করলে জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হয়

সুন্নত তরিকায় অযু করার নিয়ম সমূহ

তাহারাত আরবি। শব্দ। এর অর্থ পবিত্রতা।পবিত্রতা বলতে বুঝায় নাপাকী দূর করাকে।এখানে পবিত্রতা বলতে শারীরিক পবিত্রতা ও মানসিক পবিত্রতা দুটোকেই বোঝানো হয়েছে।

বাহ্যিক পবিত্রতা অন্তরে পবিত্রতা আনয়ন করে এবং বাহ্যিক অপবিত্রতাই মনের অপবিত্রতার নিদর্শন। অন্তরের পবিত্রতার সাথে বাহ্যিক পবিত্রতার বিশেষ সম্বন্ধ আছে।

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) শারীরিক পবিত্রতার জন্য অত্যন্ত তাগিদ দিয়েছেন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক এবং এটিই বেহেশতের পথ প্রদানকারী।পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,

বেহেশতে ঐ সকল লোক আছে যারা পবিত্র থাকতে ভালোবাসে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র লোকদের ভালোবাসেন।এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,হে বিশ্বাসীগণ!

তোমারা যখন নামাযের জন্য দাঁড়াও তখন তোমাদের হাত পা ধৌত কর।নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

অজু কি?

শরীর পবিত্র করার নিয়তে পরিষ্কার পানি দ্বারা শরীয়তের নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করাকে অযু বলে। তবে এক্ষেত্রে আমাদেরকে একটি বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে ওযুর পানি যাতে পবিত্র হয়।

ওযুর প্রকারভেদ

ওযু তিন প্রকার। যথা
১.নামাজের জন্য ওযু করা(ফরয)।
২.তাওয়াফ করার জন্য ওযু করা (ওয়াজিব)।
৩.মুখস্ত কোরআন তেলাওয়াতের জন্য,ঘুমাতে যাওয়ার জন্য গোসলের জন্য ওযু করা(মোস্তাহাব)।

ওযুর ফরজ কয়টি ও কী কী

★ ওযুর ফরজ চারটি। যথা-

  1. সমস্ত মুখমন্ডল একবার ধোয়া।
  2. কনুইসহ দুই হাত একবার ধোয়া।
  3. মাথার চারভাগের একভাগ একবার মাসেহ করা ও
  4. গিরাসহ দুই পা একবার ধোয়া।

অযুর সুন্নত কয়টি ও কী কী

অযুর মুস্তাহাব ১২টি অযুর সুন্নত গুলি হল

  1. ওযুর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা।
  2. উভয় হাত কবজি পর্যন্ত তিনবার ধোয়া।
  3. মেসওয়াক করা
  4. তিনবার কুলি করা।
  5. তিনবার নাকের ছিদ্রে পানি প্রবেশ করানো
  6. সমস্ত মুখমন্ডল তিনবার ধোয়া
  7. .কনুই সহ দুই হাত তিনবার ধোয়া
  8. সমস্ত মাথা একবার মাসেহ করা।
  9. দুই কান একবার মাসেহ করা।
  10. গিরাসহ দুই পা তিনবার ধোয়া।
  11. উভয় হাত ও পায়ের আঙ্গুল খিলাল করা।
  12. এক অঙ্গ শুকানোর আগে অন্য অঙ্গ ধোয়া।
  13. তারতীব মতো ওযু করা।
  14. নিয়ত করা।

ওযুর মুস্তাহাব কয়টি ও কী কী

★ ওযুর মোস্তাহাব-
১.ডান দিক থেকে ওযু শুরু করা।
২.কিবলামুখী হয়ে ওযু করা।
৩. ওযুতে অন্য লোকের সাহায্য না নেওয়া।
৪. নামাজের ওয়াক্ত হওয়ার আগে ওযু করা।
৫. ওযুর সময় কথা না বলা।
৬.ওযুর নিয়ত মুখে বলা।
৭.উঁচু স্থানে বসে ওযু করা।
৮.ওযুর সময় প্রত্যেকটি অঙ্গ ভালোভাবে ধোয়া।
৯.ঘাড় মাসেহ করা।
১০.প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পানি খরচ না করা।
১১. ওযুর শেষে দুরুদ ও কালেমা শাহাদাত পড়া ও
১২. ওযুর শেষে ওযুর পানির অবশিষ্ট কিছু অংশ পান করা।

অযুর মাকরুহ সমূহ

★ ওযুর মাকরুহ-
১.মুখ ধোয়ার সময় মুখে জোরে পানি দেওয়া।
২.নতুন পানি দিয়ে তিনবার মাথা মাথা মাসেহ করা।
৩.কোনো কারণ ছাড়া বাম হাতে কুলি করা ও নাকে বাম হাতে পানি দেওয়া।
৪.ডান হাতে নাক সাফ করা।
৫.ওযুতে অতিরিক্ত পানি অপচয় করা।
৬.ওযুর সময় তিন বারের কমবেশি কোন অঙ্গ ধোয়া ও
৭.ওযুর করার জন্য নিজের জন্য কোন স্থান নির্দিষ্ট করে নেওয়া ।

ওযুর নিয়ম কয়টি

★ ওযুর নিয়ম-
১.নিয়ত করা।
২.বিসমিল্লাহ বলে ওযু শুরু করা।
৩.কবজি পর্যন্ত দুই হাত তিনবার ধোয়া।
৪. তিনবার কুলি করা।
৫.দাঁত মাজা অথবা আঙ্গুল দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করা।
৬.পানি দিয়ে তিনবার নাক সাফ করা।
৭. সমস্ত মুখমন্ডল তিনবার ধোয়া।
৮.কনুইসহ প্রথমে ডান ও পরে বাম হাত তিনবার ধোয়া।
৯.মাথা,কান ও ঘাড় একবার মাসেহ করা।
১০.গিরা সহ প্রথমে ডান ও পরে বাম পা তিনবার ধোয়া।
১১.ওযু শেষ করার পর কালেমা শাহাদাত পড়া।

ওযুর নিয়ম ছবি

অজু কিভাবে করবেন অজু করার সঠিক নিয়ম সমূহ ছবির মাধ্যমে দেখানো হলো।

ওযুর নিয়ম ছবি
ওযুর নিয়ম ছবি

ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি কি কি

ওযু ভঙ্গের কারণ সাতটি

  1. প্রস্রাব- পায়খানার রাস্তা দিয়ে কিছু বের হলে (বায়ু নির্গত হলে)
  2. রক্ত,পুঁজ বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়লে
  3. মুখ ভরে বমি হলে
  4. কোনো কিছুর সাথে ঠেস দিয়ে বা চিত কাত হয়ে ঘুমালে
  5. নামাজের মধ্যে আওয়াজ করে হাসলে
  6. থুথুর সঙ্গে যদি রক্তের পরিমাণ সমান বা বেশি হওয়া
  7. পাগল,মাতাল বা অচেতন হলে।

ওযুর নিয়ত বাংলায়

★ ওযুর নিয়ত-
★ বাংলা উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন আতাওয়াযযাআ লিরাফইল হাদাসি ওয়াসতিবাহাতাল্লিসসালাতি ওয়া তাকাররুবান ইলাল্লাহি তাআ’লা।

অর্থঃ নাপাকী দূর করার জন্য ও নামাজ শুদ্ধভাবে পড়ার জন্য এবং আল্লাহ তাআ’লার নৈকট্য লাভের জন্য ওযু করছি।

ওযুর আগে ও পরের দোয়া

★ ওযু শুরুর দোয়া-
★ বাংলা উচ্চারণঃ
বিসমিল্লাহিল আ’লিয়্যিল আ’যীম ওয়ালহামদু লিল্লাহি আ’লা দীনিল ইসলামি আল ইসলামু হাককুন ওয়াল কুফরু বাতিলুন।

অর্থঃ সর্বশ্রেষ্ঠ আল্লাহ তায়ালার নামে শুরু করছি এবং ইসলাম ধর্মের জন্য সম্যক প্রশংসাই আল্লাহর উপযুক্ত। কেননা, ইসলাম সত্য ও কুফর মিথ্যা এবং ইসলাম জ্যোতির্ময় ও কুফর অন্ধকারময়।

★ওযুর শেষে কোন দোয়া পড়তে হয়

★ওযুর পরের দোয়া –
বাংলা উচ্চারণঃ
আল্লাহুম্মাজআ’লনী মিনাত্তাওয়াবীনা ওয়াজআ’লনী মিনাল মুতাতাহহিরীনা ওয়াজআ’লনী মিন ই’বাদিকাসসালিহীনা সোবহানাকা ওয়া আতুবু ইলাইকা।

অর্থঃ হে খোদা ! আমাকে তওবাকারীদের মধ্যে শামিল কর এবং একজন পবিত্র লোক বানাও এবং তোমার একজন সৎ বান্দা হিসেবে গণ্য কর। তুমি পবিত্র,তোমার নিকট তওবা করছি।

পবিত্র পানির অভাবে অথবা শারীরিক অসুস্থতার জন্য কোনো ব্যক্তি পানি ব্যবহারে অক্ষম হলে তায়াম্মুম করতে পারবে।

ওযুর শেষে কোন দোয়া পাঠ করলে জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হয়

ওযুর শেষে আকাশের দিকে তাকিয়ে কালিমায়ে শাহাদাত এই দোয়া পাঠ করলে জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হয়। সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (সহীহ মুসলিম ১/১২২)

আরবি উচ্চারণ:

أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ 

বাংলা উচ্চারণ : আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।

বাংলা অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি একক, তার কোনো অংশীদার নেই। এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সা.) তার বান্দা ও রাসুল।

রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ

ওযুর গুরুত্ব

হযরত জিব্রাইল (আঃ)যখনই আমার নিকট আসতেন তখনই তিনি দাঁত পরিষ্কারের জন্য আমাকে আদেশ দিতেন। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য এত তাগিদের কারণ কি?

পবিত্র কোরআনে এর কারণ উল্লেখ করে বলা হয়েছে, আল্লাহ ধর্মের কাজে তোমাদেরকে কষ্ট দিতে ইচ্ছা করেন না।কিন্তু তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে ইচ্ছা করেন।

এই আলোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছে ইসলামে পবিত্রতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন আমরা জানবো পবিত্র হওয়ার মাধ্যম গুলো সম্পর্কে। আমরা ওযু,তায়াম্মুম ও গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করতে পারি।

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনযে, ওযুতে প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করার সময় সে অঙ্গের গুনাহ মাফ হয়ে যায়।পবিত্রতা ও অপবিত্রতা আলো এবং অন্ধকার সদৃশ।

আলোর আবির্ভাবে যেমন অন্ধকার থাকতে পারেনা তেমনি পুণ্যের আগমনে পাপ থাকতে পারে না।

যেহেতু ইসলামে পবিত্রতার গুরুত্ব অপরিসীম তাই প্রত্যেক মুমিনের উচিত পবিত্রতার বিষয়ে সবসময় খুব সতর্ক থাকা। এখন আমরা জানবো ওযু,গোসল ও তায়াম্মুম সম্পর্কে।

ইসলামের পাঁচটি রুকনের মধ্যে সালাত হলো একটি। সালাত আদায়ের আগে ওযু করা ফরয। ওযুর একটি ফরয বাদ গেলে ওযু সম্পন্ন হবে না। এই বিষয়ে আমাদেরকে খুব সতর্ক থাকতে হবে। তাই ওযু সম্পর্কে আমাদের কয়েকটি বিষয়ে জেনে রাখা খুব দরকার।

আশাকরি অযু করার নিয়ম এবং ওযুর ফরজ সুন্নত ও মুস্তাহাব কয়টি ও কি কি এবং অযুর মাকরুহ সমূহ ওযুর আগে ও পরের দোয়া সকল দোয়া বাংলা উচ্চারণ ও বাংলা অর্থ সহ। তাছাড়া ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি কি কি ও ওযুর শেষে কোন দোয়া পাঠ করলে জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হয় এই বিষয় গুলো আমরা ভালো ভাবে শিখতে পড়েছি।

যদি কোন কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টে আমাদের কাছে জানতে পারেন নির্দ্বিধায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *