রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ কি কি Roja Vonger karon গুলি দেখুন

রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ

রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ

রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে ১. রোজা ভঙ্গের কিছু বিষয় রয়েছে যা শরীর থেকে কোন কিছু নির্গত হওয়ার সাথে সম্পৃক্ত

রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া>>

যেমন:সহবাস,ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা, মহিলাদের হায়েয ও নিফাসের রক্ত বের হওয়া,শিঙ্গা লাগানো কিংবা এ জাতীয় অন্য কোন কারণে রক্ত বের করা। 

রোজাদারের শরীর থেকে এসব নির্গত হওয়ার কারণে রোজাদারের শরীর দুর্বল হয়,কারণ এসব নির্গত হওয়ার দুর্বলতা এবং রোজা রাখার দুর্বলতা একত্রিত হয়ে রোজাদার ব্যাক্তির ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে তাই এগুলোকে কে রোজা ভঙ্গের কারণ হিসাবে আল্লাহ তাআলা নির্ধারণ করেছেন|

২.আর কিছু রোজা ভঙ্গের বিষয় রয়েছে সেগুলো শরীরে প্রবেশ করানোর সাথে সম্পর্কযুক্ত । যেমন- খাওয়া দাওয়া বা কোনো কিছু পানাহার করা।কারণ রোযাদার ব্যাক্তি যদি খাওয়া দাওয়া বা কোনো কিছু পানাহার করে, তাহলে যে উদ্দেশ্যে রোযার বিধান জারী করা হয়েছে সেটা বাস্তবায়িত হবে না।[মাজমুউল ফাতাওয়া ২৫/২৪৮]

আল্লাহ তাআলা কোরআনে কারমে সূরা বাকারা ১৮৭ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা সাওম ভঙ্গের কারণ গুলোর মূলনীতি উল্লেখ করেছেন:

“এখন তোমরা নিজ স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা কিছু লিখে রেখেছেন তা (সন্তান) তালাশ কর। আর পানাহার কর যতক্ষণ না কালো সুতা থেকে ভোরের শুভ্র সুতা পরিস্কার ফুটে উঠে" [সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৭]

রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি?

উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা রোজা ভঙ্গের প্রধান কারণ গুলো উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হচ্ছে - পানাহার ও সহবাস। আর রোজা ভঙ্গের অন্য কারণ গুলো আল্লাহর নবী রাসূল সাঃ তাঁর হাদিসে উল্লেখ করেছেন

সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি ২০২১ >>

তাই রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ ৭টি;

  1. স্ত্রী সহবাস করা
  2. পানাহার করা
  3. এমন কিছু যা পানাহারের স্থলাভিষিক্ত
  4. ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা
  5. মহিলাদের হায়েয ও নিফাসের কারণে রক্ত বের হওয়া
  6. হস্তমৈথুন করা
  7. শিঙ্গা লাগানো বা এমন জাতীয় কোন কাজ করার কারণে রক্ত বের করা

উপরোক্ত রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

কি কি কারণে রোজা ভেঙে যায়

১. স্ত্রী সহবাস করা

রোজা ভঙ্গের কারণ গুলোর মধ্যে সর্ব প্রথম হচ্ছে স্ত্রী সহবাস করা রোজা ভঙ্গের কারণ গুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় এতে লিপ্ত হলে সবচেয়ে বেশি গুনাহ হয়।

যে রোজাদার ব্যক্তি রমযান মাসে দিনের বেলা ইচ্ছেকৃত ভাবে স্ত্রী সহবাস করবে অর্থাৎ দুই খতনার স্থানদ্বয়ের মিলন ঘটাবে এবং পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ লজ্জাস্থানের ভেতরে অদৃশ্য হয়ে যাবে সে তার রোযা নষ্ট করল|

এতে করে বীর্যপাত হোক আর না হোক। রোজাদার ব্যাক্তির উপর তওবা করা, সেদিনের রোযা সম্পূর্ণ করা,এবং পরবর্তীতে এ দিনের রোযা কাযা আদায় করতে হবে এবং কঠিন কাফফারা আদায় করা রোজাদার ব্যাক্তির উপর ফরয রোজার কাফফারা আদায়ের নিয়ম

২. পানাহার করা

পানাহার বলতে বুঝানো হয়েছে — মুখ দিয়ে এমন কোন কিছু প্রবেশ করানো যা পাকস্থলীতে পৌঁছে । একই ভাবে নাক দিয়ে কোন কিছু যদি পাকস্থলীতে পৌঁছানো হয় সেটাও পানাহারের অন্তর্ভুক্ত।

এ কারণে আল্লাহর নবী রাসূল সে বলেছেন:

“তুমি ভাল করে নাকে পানি দাও; যদি না তুমি রোযাদার হও।”[সুনানে তিরমিযি (৭৮৮)

৩. এমন কিছু যা পানাহারের স্থলাভিষিক্ত

পানাহারের স্থলাভিষিক্ত বলতে এমন বিষয়কে বোঝানো হয়,যা পানাহারের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা হয়,যেমন শরীরে রক্ত নেওয়া, বা শরীরের ক্লান্তি দূরকরার জন্য স্যালাইন নেওয়া ইত্যাদি,

কিন্তু প্রয়োজনের জারণে যেসব ইনজেকশন পানাহারের স্থলাভিষিক্ত নয়; বরং চিকিৎসার জন্য দেয়া হয় যেমন:ইনসুলিন, পেনেসিলিন কিংবা শরীর চাঙ্গা করার জন্য দেয়া হয় কিংবা টীকা হিসেবে দেয়া হয় এগুলো রোযা ভঙ্গ করবে না;

[শাইখ মুহাম্মদ বিন ইব্রাহিম এর ফতোয়াসমগ্র (৪/১৮৯)] তবে, সাবধানতা স্বরূপ এসব ইনজেকশন রাতে নেয়া যেতে পারে।

৪.ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা

ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে রোজা বঙ্গের কারণ হিসাবে । দলিল হচ্ছে—

যে ব্যক্তির অনিচ্ছাকৃতভাবে বমিএসে যায় তাকে উক্ত রোযা কাযা করতে হবে না। কিন্তু যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় বমি করল তাকে সে রোযা কাযা করতে হবে 

সুনানে তিরমিযি (৭২০), আলবানী সহিহ তিরমিযি গ্রন্থে (৫৭৭) হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

৫.মহিলাদের হায়েয ও নিফাসের কারণে রক্ত বের হওয়া

মহিলাদের হায়েয ও নিফাসের রক্ত নির্গত হলে রোজা নষ্ট হয়ে যায় । আল্লাহর নবী রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন :

“যখন মহিলাদের হায়েয হয় তখন কি তারা নামায ও রোযা ত্যাগ করে না!?”[সহিহ বুখারী (৩০৪)]


তাই কোন মহিলার হায়েয কিংবা নিফাসের রক্ত বের হওয়া শুরু হলে তার রোযা ভেঙ্গে যাবে; এমনকি সেটা যদি ইফতারের সামান্য কিছু সময় পূর্বে হলেও।


আর কোন মহিলা যদি অনুভব করে যে, তার হায়েয শুরু হতে যাচ্ছে; কিন্তু ইফতারের আগে পর্যন্ত রক্ত বের হয়নি তাহলে তার রোযা শুদ্ধ হবে এবং সেদিনের রোযা তাকে আর কাযা আদায় করতে হবে না।

আর কোনো মহিলার হায়েয ও নিফাসের রক্ত যদি রাত থাকতে বন্ধ হয়ে যায় এবং সাথে সাথে তিনি রোযার নিয়ত করে নেন; তবে গোসল করার পূর্বেই ফজর হয়ে যায় সেক্ষেত্রে আলেমদের মাযহাব হচ্ছে— তার রোযা শুদ্ধ হবে।

রোজা রেখে হস্তমৈথুন করলে কি হয়?

৬. হস্তমৈথুন করা

হস্তমৈথুন বলতে বুঝায় ইচ্ছেকৃত ভাবে হাত দিয়ে কিংবা অন্য কিছু দিয়ে বীর্যপাত ঘটানো । হস্তমৈথুন যে রোজা ভঙ্গের কারণ এর দলিল হচ্ছে- হাদিসে কুদসীতে রোযাদার সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন :

 সে আমার কারণে পানাহার ও যৌনকর্ম পরিহার করে
সুতরাং যে রোজাদার ব্যক্তি রমযান মাসে দিনের বেলা হস্তমৈথুন করবে তার রোজা নষ্ট হয়ে যাবে এবং তার উপর ফরয হচ্ছে তওবা করা, সে দিনের বাকী সময় রোজা রাখা এবং পরবর্তীতে সে রোযাটি কাযা আদায় করা।

আর যদি এমন হয় যে হস্তমৈথুন শুরু করেছে কিন্তু বীর্যপাতের পূর্বে সে তা থেকে বিরত হয়ে গেছে তাহলে আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে; তার রোযা হয়ে যাবে । বীর্যপাত না করার কারণে তার রোজাটি কাযা আদায় করতে হবেনা

৭. শিঙ্গা লাগানো বা এমন জাতীয় কোন কাজ করার কারণে রক্ত বের করা

শিঙ্গা লাগানোর মাধ্যমে কোনো রোজাদারের শরীর থেকে রক্ত বের করা হলে রোজা নষ্ট হয়ে যায় তার । দলিল হচ্ছে— বিশ্ব নবী হজরত মোহাম্মদ ইরশাদ করেন :

 “যে ব্যক্তি শিঙ্গা লাগায় ও যার শিঙ্গা লাগানো হয় উভয়ের রোযা ভেঙ্গে যাবে।”

[সুনানে আবু দাউদ (২৩৬৭), আলবানী সহিহ আবু দাউদ গ্রন্থে (২০৪৭) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *